মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আজ শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সকল চা বাগানে চা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। তার অংশ হিসাবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মনু ধলাই ভ্যালির আওতায় ২২টি চা বাগান সকাল থেকে হাজার হাজার চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে। উপজেলার আলীনগর, শমসেরনগর, কানিহাটি, ছনছড়া, ফুলবাড়ি,পাত্রখোলা,চাম্পারায়, কুরমা মৃত্তিঙ্গা, দেওয়াছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা নিজ নিজ বাগানে কাজে যোগদান না করে সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। পরে সকাল ১০টায় একযোগে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
জানা গেছে, কমলগঞ্জের আলীনগর চা বাগান থেকে কয়েক শত নারী-পুরুষ চা শ্রমিক জড়ো হয়ে সকাল ১০টায় কমলগঞ্জ-টু-সমসেরনগর প্রধান সড়কের আলীনগর চৌমুহনায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় বিভিন্ন স্লোগানে দিতে থাকেন। সড়ক অবরোধের কারনে দু’পাশে যানবাহন আটকা পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান ও থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান ছুটে গিয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে সড়ক অবরোধ সরান। পরে তারা রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। একইভাবে সকাল ১১টায় শমসেরনগর, চাতলাপুর,কানিহাটি ও ডেবলছড়া চা বাগানের হাজারো শ্রমিক পায়ে হেঁটে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের সমসেরগর চৌমুহনীতে এসে জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধের পর বিক্ষোভ করেন। এখানে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অবরোধে চারমুখী সড়ক হওয়ায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করলেও শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। একই সাথে কমলগঞ্জের মৃত্তিঙ্গা চা বাগানের শ্রমিকরা ফ্যাক্টরির সামনে অবস্থান নিয়ে মুন্সিবাজার ভায়া ভৈরবগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে। শেষ খবর পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকরা ভানুগাছ-টু-পাত্রলোখা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। ৭টি ভ্যালির হাজার হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে এ ধর্মঘটের ডাকে শরিক হন।বিভিন্ন স্থানের শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দইল ভ্যালি কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী, শ্রমিক নেতা সীতারাম বিন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী, ছাত্র পরিষদ নেতা মোহন রবিদাস, চা ছাত্র সংসদের নেতা সজল কৈরী, নারী নেত্রী মৌমিত্রা সি,গীতা রানী কানু সহ বিভিন্ন ভ্যালীও পাঞ্জায়েত নেতৃবৃন্দ।শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে চা-বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের করা চুক্তি অনুযায়ী, চা শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ হয়। প্রতি দুই বছর পর পর এ চুক্তি সম্পাদনের কথা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন হয়। ওই চুক্তিতে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তিতে আর নতুন করে চুক্তি হয়নি। সম্প্রতি চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চা-সংসদ মজুরি ১৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নেতারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দইল ভ্যালি কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী কালের কণ্ঠকে বলেন, তাদের আওতাধীন কমলগঞ্জের ২২টি ও কুলাউড়ার একটি চা বাগানে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করবে।বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী বলেন, মজুরি বোর্ডের কাছে তাদের প্রস্তাব হলো দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করতে হবে। শুক্রবার পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক শ্রমচুক্তি বিলম্বিত হবার প্রতিবাদে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতির পরও কোনো সমাধান আসেনি। তাই শনিবার থেকে দেশের সকল চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।